August, 2016
অনেকদিন সময় নিয়ে পড়লাম বইটা। যেকোনো বয়সের পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য মনে হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত এলাকার মানুষজনের জন্য। ৬০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে বর্তমান সময়ে এই উপমহাদেশের আশেপাশের এলাকায় সভ্যতা আর সমাজ কীভাবে এগিয়েছে সেটাই একটার পর একটা সময়ের মানুষের গল্প দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বা সমাজপতিদের ব্যক্তিগত জীবন আর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই ফুটে উঠেছে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ঘটনাপ্রবাহ আর দর্শন। কীভাবে মানুষ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষের অনুভূতি বা ধর্মবিশ্বাসকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছে তারও একটা পরিষ্কার ছবি চোখে ভাসে। স্কুলে থাকলে সমাজবিজ্ঞান বইতে ইতিহাসের যে অংশগুলো ছিলো তার বদলে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এই বইয়ের অংশবিশেষ করে পড়লে ইতিহাস আরও অনেক সুন্দরভাবে জানতে আর বুঝতে পারতাম মনে হয়েছে।
বইটায় দুইটা অংশ আছে। ‘ভোল্গা থেকে গঙ্গা’ আর ‘কনৈলা কি কথা’। প্রথম অংশে সমগ্র ইন্দো-ইউরোপীয় এলাকা নিয়েই কথা এসেছে আর দ্বিতীয় অংশে কনৈলা বা কর্ণহট আর শিশংপা নামক জায়গার আশেপাশের এলাকার ইতিহাস। লেখা খুবই সুখপাঠ্য। তবে প্রথমদিকে পড়তে গিয়ে আটকাতে হয়েছে। এই জন্যেই পড়তে সময় নিয়েছি। তবে সেটা লেখার সীমাবদ্ধতা নাকি অনুবাদের, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসে। অনুবাদ বেশীরভাগ জায়গাতেই সাবলীল ও ঝরঝরে। তবে কিছু কিছু জায়গায় কেমন ‘আক্ষরিক’ অনুবাদ হয়েছে বলে মনে হয়। সেটা পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতাও হতে পারে।
তারপরেও সব মিলিয়ে আসাধারণ বই এটি। সময় নিয়ে হলেও সবার পড়ে দেখা উচিৎ। এতো বিশাল পরিসরের এতো রকম ঘটনা সবটা মনে না থাকলেও সবমিলিয়ে এই উপমহাদেশের যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে উঠেছে বইটা পড়ে, আর কোনো বই পড়েই এমন হয়নি 🙂