২০১৬
অনেকদিন থেকে ‘পড়তে চাই’ লিস্টে রেখে দেয়া একটা বই। শুরুটা বেশ কয়েকদিন আগে করেছি। তবে প্রথমে একটু একটু হোঁচট খেয়েছি বলতে হবে। কেমন যেন একটু খাপছাড়া আর এক কথা কয়েকবার এসেছে মনে হয়েছিলো। তবে কয়েক পাতা পড়ার পর থেকে আর থামতে হয়নি, পারিনি বলা ভালো।
বইটা পড়তে গিয়ে যতটা না গুনমুগ্ধ হয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি আফসোস হয়েছে। আহা, এমন একজন মানুষের কাছে দাঁড়িয়ে তাঁর এতো এতো অভিজ্ঞতা আর দর্শনের কথা যদি কিছুক্ষণের জন্যও শুনতে পেতাম, লেখক যদি আরেকটু গুছিয়ে আরও বিশদভাবে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার কথোপকথন লিখে রাখতেন যখন শুনতেন, ইনি ছাড়া আরও কারো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি জানতে পারতাম এই অসাধারণ জ্ঞানী এবং গুণী মানুষটার কথা! – এবং আরও অনেক আফসোস। বইতে একটা জায়গায় আছে, একদিন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার সমর সেন স্যারের বাসায় আসবেন এই উপলক্ষে তাঁর বাসায় নানান আয়োজন হয়। সেসময় লেখককে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রান্নাবান্নার ধরণ এবং তার কারণ সম্পর্কে অনেক কিছু বলেন; কিন্তু লেখকের নিজের রান্নাবান্না সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞতা বা আগ্রহ কোনোটাই না থাকায় তিনি তার প্রায় সবটাই ভুলে গিয়েছেন। পুরো বইটাতে এই অংশে আরও কি কি লেখা থাকতে পারতো ভেবে যে আফসোস হয়েছে, এরকম আর হয়নি বলা যায়। এরকম অমূল্য কথাগুলো এভাবে হারিয়ে গেলো!
লেখক নিজেই বলেছেন যে, অধ্যাপকের কথা বা তাঁর চরিত্রকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা হয়তো সম্ভব হয়নি স্মৃতি থেকে লেখার কারণে। তারপরেও, বিভিন্ন ঘটনা আর বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মন্তব্য যা পড়েছি এখানে, এতেই তাঁর জ্ঞানের পরিধি, প্রজ্ঞা, আর চারিত্রিক গুণের কথা ভেবে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। অথচ তেমন কিছুই জানতাম না এঁর ব্যাপারে বইটা পড়ার আগে! বইটা পড়তে গিয়ে তাঁদের কথাবার্তায় উঠে আসা নামগুলো থেকে অনেকগুলো বই আর লেখকের নাম টুকে রেখেছি, সম্ভব হলে অবশ্যই পড়ে দেখতে চাই এমন সব বই।
কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে এক ঘণ্টা বসে থেকে তাঁর কথা শোনা একশ’ বই পড়ার চেয়ে বেশি জানায় ও ভাবায়। বস্তুতই এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। কোনো এক বিষয়ে অনেক জানেন এমন মানুষ থাকলেও বিবিধ বিষয়ে পারদর্শী মানুষ যেমন পাওয়া কঠিন, তেমনি অনেক জানেন কিন্তু শ্রদ্ধা করার মত চরিত্রর দেখা পাওয়া আরও কঠিন। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কথা থেকে নিয়ে বলা যায়, ” বড় লেখকদের মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে। বড় মানুষেরা আসলেই বড় মাপের মানুষ।” সেদিন থেকে তাঁর মানুষের গুণের যথার্থ কদর, যার প্রয়োজন তাকে যথার্থ সাহায্য করা, সর্বোপরি উপকার পেয়ে পরে ভুলে যাওয়া মানুষের প্রতি কোনো তিক্ত মনোভাব পুষে না রাখার যে দৃষ্টান্ত দেখেছি তাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়।
বইয়ের শুরুতে একটু আটকে গেলেও পরে যে আর থামতে পারিনি, তা যেমন লেখনীর গুণ, তেমনি বিষয়ের। এতো ছোট পরিসরের একটা বইতে কত বিষয় আর কত মানুষ সম্পর্কে যে কতো কিছু জানতে পারলাম তা ভেবে কূল পাচ্ছি না আপাতত। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করছি যার জন্য কিছুটা হলেও এমন একজন ব্যক্তিত্বের কথা জানতে পারলাম।