Categories
Travel

প্যারিস কাটাকম্ব – বিচিত্র ইতিহাস আর অভিজ্ঞতা!

আগস্ট, ২০১৯

পুরো কাটাকম্ব জুড়েই এমন হাড়ের সারি। কোনো ভুতুড়ে বইয়ের মলাট খোঁজার বেশ মোক্ষম জায়গা। কিন্তু, সেখানে থাকার সময় এমন কিছু মনে হয়নি। মনে হয়েছে শুধু মানুষ!

প্রথম প্যারিস কাটাকম্বের কথা পড়ি আমি কোনো এক বইতে, খুব সম্ভবত ড্যান ব্রাউনের ‘ দ্য ভিঞ্চি কোড’  বইতেই। কিন্তু, গত সপ্তাহান্তে প্যারিস বেড়াতে যাবার প্ল্যান যখন শুরু করেছি গতমাসে, তখন এই জায়গার কথা প্রথমে একেবারেই মাথায় আসেনি। প্যারিস – বা পারী – ছোটবেলায় স্কুলের বইতে অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা ‘পারী’ ভ্রমনকথা পড়েই প্রথম মাথায় বসে যায় যে জীবনে সম্ভব হলে কোনোদিন চর্মচক্ষে দেখতে চাই শহরটা! এরপরে আঁকিবুঁকি আর বিশেষকরে রেনেসাঁ আর তার পরবর্তী সময়ের ইম্প্রেশনিজমের ব্যাপারে আগ্রহ হওয়ায় যাবার ইচ্ছা আরও বাড়েই। সময়ের ফেরে দেশে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২০১৬ সালে ইউরোপ আসি মাস্টার্সে। দু’বছরে ইরাস্মুস প্রোগ্রামের কল্যাণে তিন দেশে (অস্ট্রিয়া, ইতালি, সার্বিয়া )  থেকে আর আশেপাশের কয়েক দেশে ঘুরেও ফ্রান্সে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। শেষমেশ পিএইচডি শুরুর প্রায় এক বছর পরে কাজের চাপে চ্যাপ্টা এক উইকেন্ডে গতমাসে হুট করেই ভাবলাম প্যারিস যাবো! তো এতো কাহিনী বলার মূল কারণ হল যে প্যারিসে আমার দেখার যায়গার তালিকা অনেকদিনে জমে উঠে বেশ বড়ই ছিল। এমনিতে গত কয়েকবছরে আমার বেড়ানোর ধরণ হয়েছে এমন যে কখনো অনেক কিছু দেখার চেষ্টা করিনা। শেষমেশ কী দেখলাম আর কী দেখলাম না মিলেমিশে মাথা ভার হয়ে থাকে আর মুগ্ধতার চেয়ে ক্লান্তির পাল্লা ভারি হয়ে যায় মনে হয়। কিন্তু, প্যারিসের ব্যাপারে এই নিয়মটা মানতে পারলাম না। একে তো অনেক অনেক কিছু দেখার, তালিকা ছোট করেও খুব কমে না,  তার উপরে আগস্ট হল ইউরোপে মানুষের বেড়াতে আসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। অন্যান্য মহাদেশ থেকে তো বটেই, ইউরোপের নানা দেশ থেকেও প্রচুর মানুষ এসে জমা হয় এই কল্পনার মিশেলে গড়া নগরী পারী তে। ফলে সমস্ত দর্শনীয় জায়গায় উপচে পড়া ভিড় আর বিষম লম্বা লাইন। আগে থেকে কোথায় যাবো ঠিক করে টিকেট করে না গেলে দিনে একটার বেশি জায়গায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব, আর শান্তি করে দেখার প্রসঙ্গ তো বাদ। কাজেই যাওয়া আসা মিলে আমার আর রুসলানের মোটে সাড়ে চারদিনের প্ল্যান একেবারে ঘণ্টা হিসেব না করলেও বেলা হিসেবে করে গিয়েছি প্রায়। ল্যুভর, অর্সেই গ্যালারি, ভার্সাই প্রাসাদ, আইফেল, শাঁযেলিজে বুলভার্দ, মন্মার্ত, আর্ক দ্য ত্রিওম্ফ – ইত্যাদি তো ছিলই, মনে হল একটু আলাদা কোন জায়গায় যাওয়া যায়? কিছুক্ষণ নেট ঘাঁটতেই দুটো খুবই ভালো অপশন পেয়ে গেলাম। এই কাটাকম্ব, আরেকটা প্যেরে লাশেজ সেমেটারি। দুটো জায়গাতেই শেষ পর্যন্ত গিয়েছি, আর আলাদাভাবে মুগ্ধ হয়েছি! কাটাকম্বের নাম শুনে সেই ভাসাভাসা স্মৃতি ছাড়া আর কিছু মনে পড়লো না, তাই নেট ঘাঁটতে গিয়ে পেয়ে গেলাম এক চমকপ্রদ ইতিহাস। ভাবলাম, এটা দিয়েই শুরু হোক আমার টুকটাক বেড়ানোর গল্প লেখা! 

অসুয়ারির প্রবেশ দ্বারে সাবধান বার্তা!

পারী শহরটাকে অনেকেই তুলনা করে একটা অনেক বড় সুইস চিজের টুকরোর সাথে! উপর দিকে যতোই সমতল বা হাল্কা পাহাড়ি দেখাক, একটু মাটির ভেতর দিকে নামলেই মেট্রো লাইনেরও নিচে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ মাইল লম্বা সুরঙ্গ আছে। এই সুরঙ্গগুলি কীভাবে আসলো জানতে আমাদের প্রায় ৫৩ মিলিয়ন বছর আগে একটু ঢুঁ মেরে আসতে হবে। এখনকার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা পারীর জায়গায় তখন কেবল এক পলিমাটি জমা জলাভূমি – বা সোয়াম্প ছিল। সেই জলা সময়ের সাথে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন বছর আগে পরিণত হয় এক উষ্ণ পানির সাগরে; এখনকার ফ্রান্সের পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়ে থাকা এই প্রাগৈতিহাসিক সাগর তাতে থাকা অসংখ্য মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী, জলা গাছ আর শ্যাওলাসহ নানান প্রাকৃতিক কারণে আর ভূমিধ্বসে আস্তে আস্তে শুকিয়ে সমতল হয়ে আসে। আর এই জমাট পলিমাটি আর জীবের দেহাবশেষ জমে হয় এক চুনাপাথরের ভাণ্ডার। অনেককাল ধরে অনাবিষ্কৃত এই ভাণ্ডার এসে কাজে লাগে রোমান সাম্রাজ্যের সময়! রোমানরা এই এলাকায় এসে প্রথমে চারপাশের পাহাড় থেকে চুনাপাথর এনে ঘরবাড়ি তৈরি করে পত্তন করে ‘লুটেশিয়া’ নামের এক নগর – যা নানান পরিবর্তন আর পরিবর্ধনের পরে হয়ে যায় আজকের পারী! পাহাড়ে জমা পাথর শেষ হয়ে গেলে তারা মাটি খুঁড়ে তুলে আনতে থাকে। এখনকার হিসেব মতে সবচেয়ে প্রাচীন মাটি খুঁড়ে পাথর বের করার নিদর্শন খৃস্টীয় প্রথম শতকের। তো রোমানরা যাবার পরে ফ্রাঙ্ক’রা এসে জোরেশোরে নগর বাড়ানোর কাজে লেগে গেলে সেই মাটিখোঁড়া খানাখন্দ বাড়তে বাড়তে হয়ে যায় মাইলের পর মাইল লম্বা সুরঙ্গ, এই বিশেষ চুনাপাথর তার মানের কারণে পায় নতুন নাম, ‘প্যারিস স্টোন’ । আর উপরে উঠতে থাকে একের পর এক বিশাল নামকরা দালান যেগুলোর অনেকগুলিই এখনো আমরা দেখি – নতর দাম ক্যাথেড্রাল, ল্যুভর প্রাসাদ, লাতিন কোয়ার্টার ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত ও সব ঠিক ছিল। 

বরং একটু বেশিই ভালো চলছিলো সবকিছু, এই ক্রমবর্ধিষ্ণু নগরের নাম যশ বাড়ে, এ হয়ে ওঠে শিল্প-সাহিত্য-ব্যবসা সবকিছুর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। উপরে নগর বাড়ে, আর নিচে বাড়ে সুরঙ্গের দৈর্ঘ্য। প্রথমে এ সুরঙ্গ নগরের সীমানার বাইরে থাকলেও ১৭’ আর ১৮’ শতক নাগাদ শহরের সীমা এতোটাই বাড়ে যে, সুরঙ্গ শহরের নিচেই চলে আসে। আর তখনই শুরু হয় ঝামেলা। বাড়তে থাকা বাড়িঘর আর দালানের বোঝা এই ফাঁপা মাটি সইতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় দালান আর রাস্তা ধ্বসে পড়তে শুরু করে। ১৭৭৪ সালে রু দেফের রশের‍্যু তে প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা ধ্বসে পড়লে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। সেসময় সম্রাট ষোড়শ লুই ১৭৭৬ সালে আইন জারি করে যে রাস্তার নিচের কোনো খনি থেকে পাথর তোলা নিষিদ্ধ। সেই সাথে ১৭৭৭ সালে সুরঙ্গ আর খানাখন্দ আসলে কতদূর ছড়িয়ে আছে তা হিসেব করতে, আর যেসব জায়গায় ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেখানে ভিত মজবুত করার ব্যবস্থা করতে এক বিশেষ কমিটি ও তৈরি করেন। এই কাজের দায়িত্ব পরে তার রাজস্থপতি Charles-Axel Guillaumot এর ঘাড়ে। 

হাড়ের তৈরি ব্যারেল

এই সমস্যার পাশে তখন পারীতে চলছিলো আরেক বড় সমস্যা। একে তো পয়ঃনিষ্কাসনের লাইন সব রাস্তার উপরেই, দূষিত পানি খেয়ে মানুষ নানান অসুখে ভুগছে, তার উপর শহরের কোনো কবরখানায় আর এক চিলতে জায়গা নেই। বাড়ন্ত শহরে কাজের সন্ধানে আসা অসংখ্য মানুষ মধ্যযুগের নানান অসুখবিসুখে, যুদ্ধে, প্লেগ মহামারীতে এতো বিপুল সংখ্যায় মারা গিয়েছে যে একই কবরে একের পর এক কবর দিয়ে, আবার বড় কবর খুঁড়ে গণকবর দিয়ে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। আবার বারবার এক কবর খোঁড়া হচ্ছে দেখে লাশ পচা গন্ধে শহরের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে থাকে। এমনকি সুগন্ধির জন্য যে শহর পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত, সেখানের সুগন্ধির ব্যবসায়ীরাও সম্রাটের কাছে নালিশ জানাচ্ছে যে পাশের মাইলটাক দূরে থাকা কবরখানার গন্ধেও তাদের ব্যবসা লাটে উঠছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে একবছর বর্ষায় বেশ ভারী বৃষ্টি হল। তাতে এক বিশাল কবরখানার এক পাশের দেয়াল ভেঙ্গে প্রচুর আধাপচা গলে যাওয়া মরদেহ উঠে আসলো। এই ভীষণ পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্রাট বের করলেন এক সময়োপযোগী সমাধান। তা হল, এইযে সুরঙ্গর হিসেব নিকেশ হচ্ছে, এগুলো তো ফাঁকাই পড়ে আছে। এখানে পুরনো মরদেহগুলো সরিয়ে ফেললে শহরেরও গতি হয়, জায়গাগুলোও ব্যবহার হয়। সেই থেকে দু’ বছর টানা কাজ করে ১৭৮৫ সাল নাগাদ প্যারিসের সব সেমেটারি থেকে দেহাবশেষ রাতে রাতে সরিয়ে কাটাকম্বে স্থানান্তর করা হল। যেহেতু সব মরদেহ ধর্মীয় জায়গা থেকে নেয়া হচ্ছে, তাই সাথে একদন পাদ্রী থেকে এই স্থানান্তরের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেন। তবে এই সময়ে এইসব হাড়গোড় সাজিয়ে কিছু করার চিন্তা করেনি তারা, শুধু স্তূপ করেই রাখা হয়েছিলো।

১৭৮৬ সালে আনা এক কবরখানার নামফলক।

এর মধ্যে হয় ফরাসী বিপ্লব, রাজতন্ত্র হঠিয়ে নেপোলিয়ন আসে ক্ষমতায়। তার এক বিশ্বাস ছিল যে মানুষষের কীর্তির চিহ্ন তার রেখে যাওয়া স্মৃতিস্তম্ভেরাই সবচেয়ে ভালো বহন করে! আর ততদিনে ইউরোপের আরেক নামকরা নগরী রোমের কাটাকম্ব বিখ্যাত। তার মনে হলো যে প্যারিসেও এক বিখ্যাত কাটাকম্বের মনুমেন্ট হবে। এদিকে কবরখানা থেকে হাড়গোড় বা দেহাবশেষ কাটাকম্বে নিয়ে একরকম স্তূপ করে রাখার কারণে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। শুধু একেক কবরখানার দেহাবশেষ একেক সুরঙ্গে রেখে সেখানে ওই কবরখানার একটা ফলক রেখে আসা হতো যাতে বোঝা যায় যে কোথা থেকে এসেছে এগুলো। তো এই দুই মিলিয়ে নেপোলিয়নের নির্দেশে শুরু হয় আজকের ‘সুন্দর’ দেখতে কাটাকম্ব তৈরি! একেবারেই পচে যাওয়া হাড়গোড় আর দেহাবশেষ সরিয়ে আলাদা করে বিশেষ ভাবে রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেসব জায়গা। বাকি হাড়গোড় লাইন ধরে সাজিয়ে রাখা হয়। তাদের মাথায় ছিল যে, জায়গাটা মানুষজন দেখতে আসবে, মৃতদের আত্মীয়-পরিজন ছাড়াও সাধারণ মানুষ, শুধু স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে। সেই চিন্তা থেকে তারা বেশ অদ্ভুৎ দর্শন  হাড়-ভাস্কর্য তৈরি করে কাটাকম্ব জুড়ে। ১৮৫৯ সাল নাগাদ প্যারিসের ১৫০টা কবরখানা থেকে এখানে দেহাবশেষ এসে জমা হয়। প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের দেহাবশেষ আছে এখানে এখন! পুরো কাটাকম্বের সবটুকু জায়গা এই কাজে লাগে না। বাকি জায়গায় হয় বিখ্যাত শ্যাম্পিনিওন দ্য পারী (বা প্যারিসের মাশরুম! ) এর চাষ, আর বিয়ার তৈরির কারখানা। এরপরেও এই ২০০ মাইল লম্বা গোলকধাঁধার অনেক অংশই আমাদের যাতায়াত সীমার বাইরে। অনেক জায়গা ধ্বসে গিয়েছে, অনেক জায়গায় বাইরে থেকে পানির স্রোত এসে বন্ধ করেছে, কিছু জায়গা সেই প্রথম ম্যাপিং এর সময়ই হিসেব করা যায়নি। কাটাকম্বের টিকেট কেটে ঢুকলে আমরা মাত্র ২ কিলোমিটার জায়গা দেখি। 

মাঝের একটুকরো প্রার্থনার জায়গা। সাথে কবরখানার নামফলক। ফলকের উপর খুলির দুচোখের ঠিক মাঝখানে এক নিখুঁত গোল গর্ত। হয়তো যুদ্ধের সময়কার বা কোনো ডুয়েলের ফল – কে জানে!

তৈরির সময় থেকেই যুগে যুগে নানান উটকো মানুষের দল কাটাকম্বকে ঘিরে নানান অদ্ভুৎ গল্প ফেঁদেছে, বেআইনি ভাবে কাটাকম্বে গিয়ে কালোজাদুর চর্চার চেষ্টা করেছে! তাই এই চমকপ্রদ জায়গা দেখতে প্যারিসের সব দর্শনার্থী না আসলেও কম আসে না! যেটুকু জায়গা দেখা যায়, প্রায় ২০ মিটারের বেশি মাটির নিচে, আর সমস্ত হাড়গোড়ের পচন ঠেকাতে নিয়ম করে কখনোই একসাথে ২০০ জনের বেশি যেতে দেয়া হয়না। আর নিচে তাপমাত্রা সবসময় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়। আমরা প্যারিস গিয়ে ছিলাম সাগরদার বাসায়। উনি বললেন যে গত ৯ বছরের বেশি সময় ধরে প্যারিস থাকলেও তার কখনো যাওয়া হয়নি। কয়েকবার কেউ বেড়াতে আসলে তাদের সাথে গিয়েছেন, কিন্তু ভীষণ লম্বা লাইন দেখে আর সাহস করে যাননি। তো আমি আর রুসলান ওইদিন সকাল ৭টায় উঠে ভারসাই যাই। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে ক্লান্ত অবস্থায় ফিরে ঠিক করি যে আর কবে আসবো, লাইনে দাঁড়িয়ে দেখি! প্রায় দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষে যেতে পারলাম! 

ঢুকতেই পেঁচানো সিঁড়ি নেমে গিয়েছে টানা ২০ মিটারের গভীরে। আমরা ঢোকার সময় আগে যাওয়া একজন ভদ্রমহিলা উঠে আসছিলেন, উনি সিঁড়ি দিয়ে সম্পূর্ণটা নামতে পারেননি, মাথা ঘুরছিল দেখে উলটো চলে আসছিলেন! নামতে নামতে আমারও একসময় মাথা ঘুরে আসছিলো। নেমে প্রথমে কিছু সাধারণ চুনাপাথর কাটা সুরঙ্গ। একটু পরে কয়েকটা লাগোয়া ঘরের মতো জায়গা, সেখানে কয়েকটা ভাষায় কাটাকম্বের ইতিহাস লেখা, সাথে কিভাবে কবর খুঁড়ে দেহাবশেষ আনা হল, কিভাবে সনাক্ত করা হল কোনটা কার শরীরের হাড়, কিভাবে কোনটা কোন সময়ের এটা ঠিক করা হলো, এসবের বিবরণ। জানলাম যে, কোনো কোনো কবরে এমনকি ৬টা স্তরে দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে! আর সবচেয়ে বড় গণকবরে ৬ স্তর মিলিয়ে ২৩০ জন মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে! খুব সম্ভবত প্লেগ মহামারীর সময়কার এক গণকবর ছিল সেটা। এরপরে হাড়ের সুরঙ্গ বা অসুয়ারি শুরু হয় এক নামফলক দিয়ে, সেখানে লেখা,  ‘Arrête! C’est ici l’empire de la Mort’ বা ‘সাবধান! এখানে মৃতদের সাম্রাজ্য!’  ভেতরে ঢুকতেই নানান সজ্জায় হাড় দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য, মূলত ঠাসবুনটে সাজিয়ে রাখা হাড়ের সারি, মাঝে মাঝে মাথার খুলি দিয়ে আকা হৃদয়, ক্রস, বা কলাম। জায়গায় জায়গায় আবার একটু অর্ধবৃত্তাকার ফাঁকা জায়গা করে প্রার্থনার স্তম্ভ করা। মৃতদের আত্মীয়রা বা যে কেউ যাতে তাদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে পারে সেই ব্যবস্থা, মাটির নিচে গির্জা তো আর বানাতে পারেনা, তাই। আর প্রতিটা সারির সাথে যেই কবরখানা থেকে এগুলো এসেছে সেখানের নামফলক। শেষের দিকে এসে হাড় দিয়ে তৈরি বড় এক ব্যারেল আর কিছু চাতাল মতো ভাস্কর্য ও আছে। এগুলোর বেশিরভাগই দু’শ বছরেরও আগে করা!  

হাড়ের তৈরি হৃদয়! ঢুকতেই প্রথমদিকে এর দেখা মেলে।

জায়গাটায় রাতের অন্ধকারে একা যাবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই, এমনিতে অশরীরীর ভয় অনেক আগেই চলে গিয়েছে তারপরেও, কিছুটা গা ছমছমে অনুভূতি তো বটেই। তবে একসাথে আরও কিছু অনুভূতি কাজ করছিলো – মৃত মানুষের হাড়গোড় আর শহরের নিচের ফাঁপা জায়গার সমস্যা – এখন থেকে কয়েকশো বছর আগেও কতোটা বাস্তববাদী হলে এমন সমাধানে আসা যায়! আর সেটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে এখনো কতো সুন্দর রাষ্ট্রীয় আয় হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দেশের অদ্ভুত ইতিহাস দেশ বিদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা যাচ্ছে। আমাদের দেশের কতো চমকপ্রদ ইতিহাস আছে নিজেরাই জানি না ঠিকমতো, গুছিয়ে দেখানো তো দূরের কথা! আরেকটা বোধ হচ্ছিলো যে, একেকটা সারিতে এইযে হাজার হাজার হাড়গোড়, প্রতিটাই কোনো না কোনো মানুষের অংশ ছিল – আমি এমন হাড়গোড় হয়েই যাবো, এমন স্মৃতিস্তম্ভের অংশ না হয়ে মাটিতে মিশে জীবন – মৃত্যুর চক্রে মিশে যাবো। কী দরকার যতদিন বেঁচে আছি, ঝামেলার পেছনে সময় নষ্ট করার। স্মৃতিরাই শুধু আমার সাথে থাকবে শেষ পর্যন্ত!  

Categories
Reviews

We Should All Be Feminists, Chimamanda Ngozi Adichie

2018

A must read for everyone I have to say. A very small booklet, basically a written and modified version of a speech. But every single line, every single word is so powerful! Sad but true how strongly I could relate to every single point. Being from a society that teaches women to aspire after marriage and approval of men, where being competent and smart is considered as being intimidating, not being married even at 27 diminishing all of my accomplishments in eyes of people, my parents who used to be proud of my achievements now sometimes worrying about where I am going with my life even though I think I am doing much better than even I expected of myself sometimes.

My request to anyone who is reading this would be to read this short book of ~15 pages, and think about it. Just because we do not acknowledge something does not mean that it does not exist. Let’s stop comparing ourselves to apes and male-dominating animal kingdom, and start a step towards being human beings that look for quality and competence for betterment, and not for difference of hormonal levels and reproducing organs as a measurement of quality. 🙂

“Gender matters everywhere in the world. And I would like today to ask that we begin to dream about and plan for a different world. A fairer world. A world of happier men and happier women who are truer to themselves. And this is how to start: We must raise our daughters differently. We must also raise our sons differently.”
….
“My own definition is, a feminist is a man or a woman who says, yes, there’s a problem with gender as it is today and we must fix it, we must do better. All of us, women and men, must do better.”

Categories
Lifestyle / Tips

Weekend recipe: Low carb/gluten free New York style cheesecake

Weekends are the most active time for me in the kitchen. I suppose this is also true for most of the graduate students if not all of us. Now, besides getting bored with repetitive food menu very quickly, I also enjoy experimenting and creating new things – be it a new recipe, or trying a new form of art. And I find cooking exceptionally therapeutic to calm down. Thus, during most of our weekends, my husband Ruslan and I try out different recipes from online or make our own by mixing and matching what we know. 

Both of us love sweets. But for the last few months, we are avoiding refined sugars and store-bought sweet items. Also, found out that I have gluten intolerance. So, I was looking for a cake recipe that does not need wheat flour, but does not compromise the taste too much as well. Found a good number of ‘keto’ cheesecake recipes, but did not want to make it that strictly. So, we took ideas from few recipes and changed some parts to suit our options. And the cake turned out delicious! So, decided to keep the recipe here to share and also to make it easier to find for myself when we will be making it again. 

Ingredients: 

For crust: 
Almond flour – 1/2 cup
Coconut flour – 1/2 cup
Psyllium husk powder – 1 table spoon (optional)
Butter – 1/3 cup (melted)
Coconut sugar – 1 tea spoon

For filling:

Cream cheese – 400 gm – softened
Coconut sugar – 120 gm (1/2 cup, any kind of sugar/sugar free sweetener should be fine.)
Plain greek yogurt – 120 gm (1/2 cup, sour cream is more appropriate for the classic recipe.)
Heavy whipping cream – 180 gm (3/4 cup)
Eggs – 2 (room temperature)
Vanilla essence – 1 table spoon (15 ml)
Zest – 1 lemon
Lemon juice – 1/4 lemon

Preparation:

Mix all the items for crust in a bowl till the flour becomes crumbly by mixing with butter. Make sure that all the flour are more or less evenly mixed with the butter. Adjust with a tea spoon more butter if it looks too dry.

Line a spring-foam cake pan with baking paper at the bottom and butter on the sides. Put the crust mix and spread evenly while gently pressing as you would do for a classic graham cracker made crust. Make sure that the crust is not too loose that it falls by crumbling if the pan is tilted. And not too pressed that it has an uneven distribution at the bottom.

Put the crust and pan in the fridge. Preheat oven to 180 degree Celsius.

In a medium to large bowl, mix the softened cream cheese and the sugar till the sugar is not grainy anymore. It took about a minute in electric hand-mixer. 

Add in the yogurt, and heavy cream. Mix till well combined. 

Add in the 2 eggs one by one and mix each time. Lastly add the vanilla essence, lemon zest, and the lemon juice. Mix everything once again. Scrape from the sides to make an even mix everywhere. 

The mix should have a creamy mayonnaise-like consistency. Do not worry if it looks a bit runnier, but make sure it is a smooth mix. 

Take the pan with crust out of fridge and pour the filling mix. Tap a few times and use a toothpick to let the air bubbles out from the mix. It will make the cake smoother. 

Wrap the bottom of the pan with aluminium foil and put it on a casserole pot or high-edged baking tray. Pour in hot water till it rises up to half of the length of the cake pan. The water bath or bain-marie ensures even and controlled heat at the bottom for the creamy texture. 

Bake at 180 degree Celsius for 30 minutes, and at 150 degree Celsius for another 30 minutes. Afterwards, turn the heat off and let it rest at the hot oven for an hour. 

After an hour, take it out, let it cool, and then put in fridge for 6 hours or overnight before serving! 

Bonus: Strawberry Compote to serve with the cake:

In a microwaveable bowl, take 7/8 roughly chopped fresh or frozen strawberries/raspberries. Add in 1 tablespoon of sugar of your choice. Put in microwave for 2 minutes. After 2 minutes, take out, give it a stir and put for another minute. Mash the strawberries slightly with a fork. Pour on a freshly sliced cheesecake, and enjoy! 

Categories
Reviews

ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়, জসীমউদ্দীন

2016

একেবারেই একটানা পড়ে শেষ করলাম বইটা। ছোটবেলা থেকেই কবি জসীমউদদীনের মুগ্ধ পাঠক ছিলাম, এখন তাঁর গদ্যরও ভক্ত হয়ে গেলাম। যদিও এটিকে গদ্য না বলে স্মৃতিকথা বলাই যুক্তিযুক্ত। কবিগুরু এবং ঠাকুরবাড়ির আরও বেশ কিছু মানুষ, বিশেষ করে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে আসা এবং তাঁদের সাথে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ নিয়েই লেখা বইটি। 

বইটি পড়তে পড়তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন, কাজ, ও ব্যক্তিত্বকে এক নতুন আলোকে দেখতে পেলাম যেন; যেই কবি লেখা মনমতো হওয়ার আগে পর্যন্ত বারে বারে লেখার সংশোধন ও পরিবর্তন করেন, নাটক মঞ্চায়নের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সংলাপ আর কাহিনীতে পরিবর্তন করতে থাকেন সবচেয়ে ভালোভাবে কাজটি করার জন্য, ভোরে উঠে সারাদিন লেখায় মশগুল থাকেন, আবার তাঁর কাছে এসে কোনো দর্শনার্থী ফিরে গেলে মনঃক্ষুণ্ণ হন, সকলের সাথে দেখা এবং কথা বলেন, সাধ্যমত সকলের জন্য করেন, আবার কেউ উপকার পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে এলে অবাক হয়ে যান। সাহিত্যের এতো দিকে তাঁর বিস্তর পদচারনা, অথচ বিশ্বভারতী আর শান্তিনিকেতনের মত বড় দুটো প্রতিষ্ঠান চালিয়ে গিয়েছেন সফলভাবে। বই থেকে জানলাম এতোরকম কাজ করতে গিয়ে ঠাকুরবাড়ির বাকি সকলের এবং আরও কতজনের কতো নীরব ত্যাগ এবং অবদান ইন্ধন জুগিয়েছে। জানলাম অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এবং তাঁর আরও দুই ভাইয়ের সাধনার কথা; ছবি আঁকা নিয়ে তাঁদের দিন রাত পার করে দেয়ার গল্প। 

পড়ার সময় গুণী মানুষজনের কথা, কাজ, এবং কাজের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে, মানুষের সাথে মানুষের সৌহার্দ্য আর বাচ্চাদের মন জয়ের জন্য লেখকের চেষ্টার কথা শুনে অদ্ভুত প্রশান্তি হয়েছে, বন্ধুরা মিলে প্রতিবেশি একজনের সাথে প্র্যাক্টিক্যাল জোকের কাহিনী পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই জোরে হেসে ফেলেছি, আবার জীবনের শেষ দিকে এসে এই বাড়ির মানুষজনের দুর্দশার কথা পড়তে গিয়ে চোখ ভিজে এসেছে। 

পল্লীকবি জসীম উদদীনের লেখায় গ্রামবাংলার যে মায়াভরা রূপটা দেখতে পাই, তাঁর লেখায় যে মাটির গন্ধ পাই, সেইরকম মায়া এই বইটা জুড়েও ছিলো। একটা শহর আর শহুরে মানুষজন নিয়েও যে এমন কোমল মমতা নিয়ে লেখা যায়, এমনটা আগে দেখিনি। মিষ্টি সব উপমা, সহজ সরল মুগ্ধতার ভাষা, আর লেখাজুড়ে আপনজনকে নিয়ে লেখার মায়া যে মনের ভেতর থেকে আসা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা মিলেই গড়ে উঠেছে – তাতে সন্দেহ হবার অবকাশ নেই। লেখকের এ ধরনের আরও যে কয়টি বই রয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব পড়ে ফেলার আশা রাখি 😀

Categories
Reviews

যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা

২০১৬

অনেকদিন থেকে ‘পড়তে চাই’ লিস্টে রেখে দেয়া একটা বই। শুরুটা বেশ কয়েকদিন আগে করেছি। তবে প্রথমে একটু একটু হোঁচট খেয়েছি বলতে হবে। কেমন যেন একটু খাপছাড়া আর এক কথা কয়েকবার এসেছে মনে হয়েছিলো। তবে কয়েক পাতা পড়ার পর থেকে আর থামতে হয়নি, পারিনি বলা ভালো।

বইটা পড়তে গিয়ে যতটা না গুনমুগ্ধ হয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি আফসোস হয়েছে। আহা, এমন একজন মানুষের কাছে দাঁড়িয়ে তাঁর এতো এতো অভিজ্ঞতা আর দর্শনের কথা যদি কিছুক্ষণের জন্যও শুনতে পেতাম, লেখক যদি আরেকটু গুছিয়ে আরও বিশদভাবে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার কথোপকথন লিখে রাখতেন যখন শুনতেন, ইনি ছাড়া আরও কারো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি জানতে পারতাম এই অসাধারণ জ্ঞানী এবং গুণী মানুষটার কথা! – এবং আরও অনেক আফসোস। বইতে একটা জায়গায় আছে, একদিন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার সমর সেন স্যারের বাসায় আসবেন এই উপলক্ষে তাঁর বাসায় নানান আয়োজন হয়। সেসময় লেখককে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রান্নাবান্নার ধরণ এবং তার কারণ সম্পর্কে অনেক কিছু বলেন; কিন্তু লেখকের নিজের রান্নাবান্না সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞতা বা আগ্রহ কোনোটাই না থাকায় তিনি তার প্রায় সবটাই ভুলে গিয়েছেন। পুরো বইটাতে এই অংশে আরও কি কি লেখা থাকতে পারতো ভেবে যে আফসোস হয়েছে, এরকম আর হয়নি বলা যায়। এরকম অমূল্য কথাগুলো এভাবে হারিয়ে গেলো!

লেখক নিজেই বলেছেন যে, অধ্যাপকের কথা বা তাঁর চরিত্রকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা হয়তো সম্ভব হয়নি স্মৃতি থেকে লেখার কারণে। তারপরেও, বিভিন্ন ঘটনা আর বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মন্তব্য যা পড়েছি এখানে, এতেই তাঁর জ্ঞানের পরিধি, প্রজ্ঞা, আর চারিত্রিক গুণের কথা ভেবে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। অথচ তেমন কিছুই জানতাম না এঁর ব্যাপারে বইটা পড়ার আগে! বইটা পড়তে গিয়ে তাঁদের কথাবার্তায় উঠে আসা নামগুলো থেকে অনেকগুলো বই আর লেখকের নাম টুকে রেখেছি, সম্ভব হলে অবশ্যই পড়ে দেখতে চাই এমন সব বই।

কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে এক ঘণ্টা বসে থেকে তাঁর কথা শোনা একশ’ বই পড়ার চেয়ে বেশি জানায় ও ভাবায়। বস্তুতই এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। কোনো এক বিষয়ে অনেক জানেন এমন মানুষ থাকলেও বিবিধ বিষয়ে পারদর্শী মানুষ যেমন পাওয়া কঠিন, তেমনি অনেক জানেন কিন্তু শ্রদ্ধা করার মত চরিত্রর দেখা পাওয়া আরও কঠিন। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কথা থেকে নিয়ে বলা যায়, ” বড় লেখকদের মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে। বড় মানুষেরা আসলেই বড় মাপের মানুষ।” সেদিন থেকে তাঁর মানুষের গুণের যথার্থ কদর, যার প্রয়োজন তাকে যথার্থ সাহায্য করা, সর্বোপরি উপকার পেয়ে পরে ভুলে যাওয়া মানুষের প্রতি কোনো তিক্ত মনোভাব পুষে না রাখার যে দৃষ্টান্ত দেখেছি তাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়।

বইয়ের শুরুতে একটু আটকে গেলেও পরে যে আর থামতে পারিনি, তা যেমন লেখনীর গুণ, তেমনি বিষয়ের। এতো ছোট পরিসরের একটা বইতে কত বিষয় আর কত মানুষ সম্পর্কে যে কতো কিছু জানতে পারলাম তা ভেবে কূল পাচ্ছি না আপাতত। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করছি যার জন্য কিছুটা হলেও এমন একজন ব্যক্তিত্বের কথা জানতে পারলাম।

Categories
Reviews

ভোল্‌গা থেকে গঙ্গা, রাহুল সংকৃত্যায়ন

August, 2016

অনেকদিন সময় নিয়ে পড়লাম বইটা। যেকোনো বয়সের পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য মনে হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত এলাকার মানুষজনের জন্য। ৬০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে বর্তমান সময়ে এই উপমহাদেশের আশেপাশের এলাকায় সভ্যতা আর সমাজ কীভাবে এগিয়েছে সেটাই একটার পর একটা সময়ের মানুষের গল্প দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বা সমাজপতিদের ব্যক্তিগত জীবন আর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই ফুটে উঠেছে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ঘটনাপ্রবাহ আর দর্শন। কীভাবে মানুষ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষের অনুভূতি বা ধর্মবিশ্বাসকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছে তারও একটা পরিষ্কার ছবি চোখে ভাসে। স্কুলে থাকলে সমাজবিজ্ঞান বইতে ইতিহাসের যে অংশগুলো ছিলো তার বদলে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এই বইয়ের অংশবিশেষ করে পড়লে ইতিহাস আরও অনেক সুন্দরভাবে জানতে আর বুঝতে পারতাম মনে হয়েছে। 

বইটায় দুইটা অংশ আছে। ‘ভোল্গা থেকে গঙ্গা’ আর ‘কনৈলা কি কথা’। প্রথম অংশে সমগ্র ইন্দো-ইউরোপীয় এলাকা নিয়েই কথা এসেছে আর দ্বিতীয় অংশে কনৈলা বা কর্ণহট আর শিশংপা নামক জায়গার আশেপাশের এলাকার ইতিহাস। লেখা খুবই সুখপাঠ্য। তবে প্রথমদিকে পড়তে গিয়ে আটকাতে হয়েছে। এই জন্যেই পড়তে সময় নিয়েছি। তবে সেটা লেখার সীমাবদ্ধতা নাকি অনুবাদের, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসে। অনুবাদ বেশীরভাগ জায়গাতেই সাবলীল ও ঝরঝরে। তবে কিছু কিছু জায়গায় কেমন ‘আক্ষরিক’ অনুবাদ হয়েছে বলে মনে হয়। সেটা পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতাও হতে পারে। 

তারপরেও সব মিলিয়ে আসাধারণ বই এটি। সময় নিয়ে হলেও সবার পড়ে দেখা উচিৎ। এতো বিশাল পরিসরের এতো রকম ঘটনা সবটা মনে না থাকলেও সবমিলিয়ে এই উপমহাদেশের যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে উঠেছে বইটা পড়ে, আর কোনো বই পড়েই এমন হয়নি 🙂 

Categories
Reviews

The Things You Can See Only When You Slow Down, Haemin Sunim

June, 2017

Heart warming, soothing, simple, yet full of wisdom. Started reading it at a difficult time and this book helped me find myself back again. I wouldn’t say it is filled with extraordinary enlightenment, but that is the best part about it. There are some simple yet powerful truth which we all know deep down inside, but it is so easy to lose our connection with those when we are too wound up in our busy life. This book was a kind a gentle reminder to those truths for me. A small book, but I took my time reading and thinking about the lines. Will definitely read again and again. And also will recommend to anyone who is distressed with anything in their life right now. This book is a gem indeed 🙂 !

Categories
Lifestyle / Tips

My TOEFL Preparation and Tips

Firstly, the only time I took the TOEFL or ‘Test Of English as a Foreign Language’ was on 7th of November, 2015. That is more than 3.5 years ago from now. I had to take it to apply for my MSc in Europe. For various reasons, I had only a couple of weeks to prepare for it. However, I managed to do well with a score of 119 on a scale of 120 (Reading – 30, Listening – 30, Speaking – 30, Writing – 29). I made a short write-up about my preparation right after getting the scores, and I still get questions from people who are preparing for it from Bangladesh (where I am from). So, I decided to write about it here to keep it available for a longer time in case it can still help someone. 

Now, I am no trainer for TOEFL, and my strategies are based on only one attempt. So, I am not saying that this will definitely work for any level of background. But if you are short on time, and have a decent background in English already, this might help you to tackle TOEFL as a test. Also, I do not work with any of the organizations that are involved with test test taking or preparation. This is entirely from my personal experience. Now that the disclaimer is done away with, I will go on with my suggestions. 

Preparation: 

The first step will definitely be to familiarise yourself with the four sections of the test and the types of questions that come in each section. TOEFL is maintained by ETS from USA, and they have very handy short guides in the ETS-TOEFL website. The test pattern is pretty standard and repetitive. It may take maximum a couple hours to go through the question types and how you are expected to answer each section. But it will save you a lot of time to prepare for things out of context and also save you from any element of surprise during the exam.

For TOEFL, you do not really need to memorise a lot of vocabulary if you have a decent vocabulary grown over your high school and undergraduate study in Bangladesh (and I am pretty sure about from most other countries). Mostly, there are only a few questions from this part, and the word meaning is asked in terms of the context of the paragraph. So, it is not too difficult, and definitely not worth it to spend your short time at hand to spend on preparing for this part. 

If you are too insecure about your vocabulary level, there are a large number of apps available. I downloaded the ‘Magoosh’ app for TOEFL vocabulary list, and went through the lists very quickly. They were almost all known words, which is the correct level for TOEFL. 

I took notes while reading or preparing to categorise the question patterns and later on how to answer those questions. It was more like a chart and was very helpful to go through while I was stuck during the mock tests. 

I went through the materials from “Notefull” to get an idea about how to answer different types of questions after going through ETS materials. They were very helpful. Especially for the reading and speaking part. I went through the other two parts anyway as I had no clue about what comes and what not. And that was about all the ‘Tips’ materials that I used.

There is a dedicated mock test taker for TOEFL from ETS called TOEFL Practice Online aka TPO. After going through the aforementioned materials, I practiced a few tests in TPO. It resembles the original test very closely. The writing and speaking sections were completely similar. The reading and listening parts seemed a little easier than the original one. However, I found that TPO reduces marks more than the original test for wrong answers because my scores were better in the final one. That might be changed in the updated versions as I have no idea about the recent updates. 

In TPO, I gave 2 complete tests, 6~7 reading, 2~3 listening, 2 writing and 5 speaking altogether. I was not happy with my reading test scores in the beginning, and I did not like how I was answering my speaking section. So, I focused on those 2 more.

TOEFL is a simple test as it is about our capacity to communicate and not our capacity to deliver academically usable or literature worthy pieces. So, it is OKAY to use simple word and structure as long as it is within the context and is correct in grammar and spelling. I think, they are pretty liberal with the pronunciation as it is normal to have accent for different native language speakers. 

In reading part, the most important is reading comprehension and paying attention to the question as they can be a bit tricky. Pay attention to the negative terms in the question and in the answer options. Also, it is important to answer from the given paragraph or essay and NOT from your knowledge. The test is not about being right or wrong in a topic, it is about understanding the questions the ask and answering them in accordance with the materials they provide. So, read and answer carefully. It will be tricky, but not difficult.

In listening part, the most important part is to take quick notes that you can understand. As nothing will be repeated, and there can be too many things to remember, even a word that reminds you o the context will be helpful. The same goes for the writing part. Clear and fast notes will definitely improve your score in listening, and writing. And again, answer from the materials (audio or script) they provide, and not from knowledge. 

For speaking and writing part, tips from Notefull are enough I think. They also provide good format for speaking and writing part. I would suggest looking at those and coming up with a version that you are most comfortable with while you do the mock tests. 

Last but not the least, during speaking, use deep breaths to calm down and collect your thoughts if necessary instead of saying random fillers like umm, err etc. Also, do not try to speak from memory. Try to speak like you are talking to a person. You do not have to explain everything, and it is better to finish a few seconds earlier than the given time than being midway when the recorder stops. 

Preparation Time:

I had my TOEFL on November 7th and started preparing from about two weeks ago. But I had my job and spent 1~2 hours per day only. So, I’d say if you are going for intensive preparation, 1 week will be enough. But, it is more about practicing than studying; so the more time you spend, the better. Also, it depends on your level where you started.

Overall, I will stress again that TOEFL is not a complicated test. It does not need extreme preparation and knowledge. But, like any other tests, some strategies can make it much less intimidating and can increase the chance of a higher score. I hope this post helps you if you are just starting the preparation and are lost about where to start and what to do. Good luck! You are welcome to leave any questions or comments. 

Categories
Reviews

আগুনপাখি, হাসান আজিজুল হক

মার্চ, ২০১৬

অনেক অনেকদিন পর মোটামুটি এক নিঃশ্বাসে একটা বই পরে ফেললাম। ছোটবেলায় গ্রামে যখন ছিলাম, সন্ধ্যে হলেই কিছুক্ষণ নামেমাত্র পড়াশোনা করে দাদুর কাছে বসে যেতাম আমরা দুই ভাইবোন। বেশিরভাগ সময়েই লোডশেডিং চলতো আর উঠোনে খোলা আকাশের নিচে বসে হাতপাখার বাতাস খেতে খেতে আমরা শুনতাম দাদুর জীবনের গল্প- কিভাবে বরিশালের মশাং নামক এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে মাত্র দশ বছর বয়েসে বিয়ে করে এই সংসারে এলো- কিভাবে অনেক দিন পর্যন্তই এই বড় বাড়িতে মন খারাপ করেই তার সময় কেটে যেত- কিভাবে সে কোনও কাজ না জেনে এলেও সময়ের সাথে সব শিখে সংসারের হাল ধরলেন – কিভাবে সংসারের ভালো মন্দ সময়গুলো গেলো- কখন একেকটা অসময়ের মৃত্যু এসে জীবনটা ওলট পালট করে দিলো- কিভাবে তারপরেও জীবন এগিয়ে গেলো- কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়টা তারা পার করলেন- এমন হাজারও জীবনের গল্প শুনতে শুনতে ছোটবেলায় কোথায় যে হারিয়ে যেতাম! একটু বড় হবার পর থেকেই তাই মাথায় ঘুরছে যে তার এই সব গল্প- সবকিছু যেভাবেই হোক লিখে ফেলতে হবে। পৃথিবীতে কত কি হয়ে যায়- তার প্রভাব একেবারেই কারও সাতে-পাঁচে না থাকা নিরীহ মানুষের জীবনে কিভাবে আন্দোলন বয়ে আনে, তা সত্যিই স্তব্ধ করে দেয় সময়ে সময়ে। আগুনপাখি বইটি পড়ে মনে হচ্ছিলো আমার দাদুর গল্পই যেন পড়ছি!

গাঁয়ের এক সাধারণ মেয়ের জবানিতে লেখা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের গল্প। তার বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে আসার গল্প। বিরাট সংসারে ছায়া দিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মেনে নিয়ে যা আছে তাই নিয়ে হাসিমুখে পার করে দেয়া সময়ের গল্প। এর মাঝেই জন্ম- মৃত্যু – হাসি – কান্না মিলে জীবন এগিয়ে যায়। পুরো বইটা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল মাটির গন্ধ আর একমাত্র মায়ের মনেই থাকা সম্ভব এমন মায়া। কোনও কিছুই মুখফুটে না বললেও যে মানুষ তার পরিবারের মানুষগুলোর সংসার টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম অকপটে বুঝে নিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে যাচ্ছে তাকে ভালো না বেসে কি পারা যায়! তাই বইটি পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই কখনো হেসে কুটিকুটি হয়েছি, কখনো বুক ভেঙ্গে যেতে চেয়েছে হাহাকারে। বিশ্বযুদ্ধ, ভারত ছাড় আন্দোলন, দেশ বিভাগ, মঙ্গা- এসবকিছুকেই একেবারে আটপৌরে জীবনের কাছ থেকে দেখতে পেলাম যেন। আর শেষে এসে এই সর্বংসহা সরল মেয়ের জীবনে একবার অবাধ্য হবার সময়ও তাই তাকে সমর্থন না জানিয়ে পারলাম না। অসাধারণ বই!

Categories
Astrophysics

উল্কা আর উল্কাবৃষ্টি

গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতের আকাশে একটা ছোট আলোর বিন্দু হঠাত করে নিচের দিকে পড়ে যেতে আমরা অনেকেই দেখেছি। মনে হয় যেন আকাশ ভরা মিটমিটে তারাগুলো থেকে একটা বুঝি টুপ করে পড়ে গেল! এব্যাপারে বড়দের জিজ্ঞাসা করে এগুলো যে ‘খসে পড়া তারা’-ই, তাও হয়ত শুনেছি অনেকে। আবার এই ‘খসে পড়া তারার’ মত দেখতে জিনিসগুলি যে আদতে তারাই নয়, বরং এদের নাম ‘উল্কা’ তা-ও কেউ কেউ জানি। কিন্তু ‘উল্কা’ জিনিসটা আসলে কি অথবা উল্কাবৃষ্টি আসলে কেন হয়? আর কেনইবা উল্কাদের খসে পড়া তারার মত দেখায় এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তরগুলি আমাদের অনেকের কাছেই কিছুটা ধোয়াটে।

উল্কার সংজ্ঞাটা বেশ সাদাসিধা। কোনো মহাজাগতিক বস্তু(সহজ কথায় যেসব বস্তু মহাকাশে ঘুরে বেড়ায়) পৃথিবীর যথেষ্ট কাছে এসে পড়লে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রভাবে এটি ভূপৃষ্ঠের দিকে তীব্র বেগে এগুতে থাকে আর এসময় এর সাথে বায়ুমণ্ডলের কণাগুলোর সংঘর্ষে জ্বলে ওঠে। তখন যে ক্ষণস্থায়ী সরু আলোর রেখা দেখা যায়, তা-ই উল্কা। বেশিরভাগ সময়ই উল্কার আকার এত ছোট হয় যে এটি আসার পথেই জ্বলে ছাই হয়ে যায়। যদি এটি মোটামুটি বড় আকারের হয় তবে এর যে অবশিষ্টাংশ ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে তা হল উল্কাপিণ্ড।

কথা হল, কোন মহাজাগতিক বস্তু আসে এমনভাবে? পৃথিবীর চারপাশে শুক্র বা মঙ্গলের আগে পর্যন্ত তো তেমন কিছুই নেই, তাহলে শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে প্রতি ঘণ্টায়ই যে গড়ে ৫টি উল্কাপাত দেখা যায়, তার উৎপত্তি কোথায়? উত্তর হল- অনেক জায়গাতেই! আসল কথা হল, সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট পরিচিত সদস্য গ্রহাণুগুলোও পৃথিবীর বেশ দূরে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু, এগুলো ছাড়াও অসংখ্য ছোট ছোট বালুকণা বা পাথরের টুকরোর মত পদার্থ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। আর মোটামুটি সিংহভাগ উল্কাই এসব কণার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জ্বলে ওঠার দৃশ্য। তাই এদের কেউই পৃথিবী পৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। প্রতি ১০০ বছরে হয়ত মাত্র কয়েকটি ছোট খাটো টুকরো পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছে আর এখানে এসে বিশালাকার খাদ কিংবা ডাইনোসরদের বিলুপ্ত করে দেবার মত ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী উল্কা আসার সম্ভাবনা মোটামুটি প্রতি ৩লক্ষ বছরে একবার মাত্র। এগুলো হল গ্রহানু বেল্টের কোনো বিক্ষিপ্ত সদস্যর কাজ যেটি ঘুরতে ঘুরতে মঙ্গল ও পরে পৃথিবীর আকর্ষণে পথ বদলাতে গিয়ে শেষমেশ পৃথিবীর মহাকর্ষ বল এড়াতে না পেরে এখানে আছড়ে পড়ে।

সাধারনত, ভোরের দিকে সন্ধ্যার চেয়ে বেশি উল্কা দেখা যায়। কারণ, সেসময় পৃথিবীর গতির দিকেই উল্কাদের অবস্থান হয়। খালি চোখে আমরা যেসব উল্কা দেখি সেগুলো প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরে থাকে আর এদের বেগ থাকে প্রায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার/সেকেন্ড।

এ তো গেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া উল্কার কথা। এখন আসি উল্কাবৃষ্টিতে। প্রতি বছরই কিছু নির্দিষ্ট দিনে আকাশে উল্কার পরিমান বেশ বেড়ে যায় (প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০/৪০ টি)- একেই বলে উল্কাবৃষ্টি। আর এই অসংখ্য উল্কা আকাশের একেকটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই আসে। এই জায়গাগুলিকে বলে বিকিরণ বিন্দু বা ‘radiant’। এ থেকে মনে আসতেই পারে যে এগুলো নিশ্চয়ই একই মাতৃবস্তু থেকে আসছে; আসলেও তাই। সূর্যের কাছে যে সকল ধূমকেতু আসে সেগুলোর বিশাল আর সুবিস্তৃত বরফকণাপূর্ণ গ্যাসীয় লেজের যেসব অবশিষ্টাংশ এদের কক্ষপথের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকে, পৃথিবী তার চলার পথে এদের কাছে চলে আসলে মোটামুটি কাছাকাছি অঞ্চল থেকে এরা উল্কা হয়ে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। এভাবে একেকটি ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ধূলিকণার দঙ্গল থেকেই বেশিরভাগ উল্কাবৃষ্টি হয় বলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে একেকটি উল্কাবৃষ্টি হয়। আর এই নির্দিষ্ট বিন্দুগুলো মূলত আকাশের পটভূমিতে একেকটি তারামণ্ডলের মধ্যে থাকে। তাই অবস্থান সনাক্তকরণ সহজ করতে একেকটি উল্কাবৃষ্টি যে তারামণ্ডলের পটভূমিতে হয়- তার নামকরণ সেই তারামণ্ডলের নামানুসারে হয়। এসময় সেই মণ্ডলের নামের শেষে সাধারনত –ids অথবা –nids যোগ করা হয়। অনেক সময় মণ্ডলের নামের শেষের দু-একটা বর্ণ বাদ দিয়েও শেষাংশ যোগ করা হয়। যেমনঃ আগস্টের ১২ তারিখে যে উল্কাবৃষ্টি দেখা যায় তার নাম ‘পারসেইডস’ (perseids)উল্কাবৃষ্টি যেটির নামকরণ হয়েছে পারসিয়াস তারামণ্ডল থেকে আর এটি হয় ‘সুইফট টাটল’ নামক ধূমকেতুর অবশিষ্টাংশ থেকে। অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে দেখা যায় ‘ওরায়নিডস’ (orionids) নামক উল্কাবৃষ্টি যেটির নামকরণ আর কারণ যথাক্রমে কালপুরুষ মণ্ডল আর হ্যালির ধূমকেতুর অবশিষ্ট। নিচের ছকে বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উল্কাবৃষ্টির নাম ও সময় দেওয়া হলঃ

নাম —সর্বোচ্চ উল্কাপাতের দিন (সাধারণত)

কোয়াড্রানটিডস (Quadrantids) —জানুয়ারী ৩

লাইরিডস (Lyrids) —এপ্রিল ২১

ইটা অ্যাকুয়ারিডস (Eta Aquarids) — মে ৫

পারসেইডস (Perseids) —আগস্ট ১২

ওরায়নিডস (Orionids) —অক্টোবর ২০

লিওনিডস (Leonids) —নভেম্বর ১৭

জেমিনিডস (Geminids) —ডিসেম্বর ১৩

এই দিনগুলিতে বা তার একদিন আগে-পরের দিনে ঢাকার মত আলো-দূষণময় শহরগুলি ছাড়া অন্য যেকোনো জায়গাতেই থাকো না কেন, রাতের আকাশে ঘন্টাখানেক তাকালে ৩০/৪০টা না হলেও, অন্ততপক্ষে ৫/১০টা উল্কা চোখে পড়বেই। আর ভাগ্য ভালো হলে একসাথে কয়েকটাও দেখা যায় মাঝে মাঝে। ব্যাখ্যা জানা থাকুক আর নাই থাকুক, তারাভরা আকাশ দেখা যেমন মজার, উল্কা, ধূমকেতু, গ্রহণের মত মহাজাগতিক ঘটনা দেখা আরও বেশিই মজার। তাই এসব সময় উপযুক্ত জায়গায় থাকলে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেলাই ভালো। আর সেই সাথে ব্যাপারটা কি আর কেনো হচ্ছে তা জানা থাকলে তো কথাই নেই!     

দ্রষ্টব্যঃ লেখাটা ২০১৫ সালের। এটাও কোনো ম্যাগাজিন বা শিশু সংকলনের জন্য লেখা। পুরনো লেখাগুলি জড়ো করে রাখতেই রেখে দিচ্ছি এখানে।

Translate »